বরিশালের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর গুঠিয়ার সন্দেশ

প্রকাশঃ মার্চ ২, ২০১৫ সময়ঃ ২:৩১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:৩১ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

guthia-sondesh-barisalবরিশাল সদর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরের বানারীপাড়া উপজেলার একটি ইউনিয়ন গুঠিয়া। এখানে আপনি কেন যাবেন? সেটা বরিশালে এলেই টের পাবেন। অথবা ভোজনরসিক হলে আপনার জানাই আছে।

কারণ গুঠিয়ার সুস্বাদু সন্দেশ যেন একাকার। কেউ কেউ বলেন, বরিশালের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হলো গুঠিয়ার সন্দেশ। স্বাদে ও গুণে অনন্য এ সন্দেশে লেগে থাকে গরুর দুধের টাটকা ঘ্রাণ। তাই বরিশালে আসা পর্যটকরা গুঠিয়ার সন্দেশ নিয়েই বাড়ি ফিরেন।

গুঠিয়ার সন্দেশ অর্ধশতাব্দী ধরে দেশে-বিদেশে সুনাম তৈরি করেছে। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, পাকিস্তান আমলে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া থেকে সন্দেশ তৈরির কৌশল শিখে আসেন সতীশ চন্দ্র দাস নামের এক ময়রা।

সে কৌশলের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে ১৯৬২ সালে তৈরি করেন এক নতুন ধরনের সন্দেশ, যা এখন গুঠিয়ার সন্দেশ নামে রোশনাই ছড়াচ্ছে। সতীশ চন্দ্রের পরলোকগমনের পর সন্দেশের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন তার ভাইয়ের ছেলে পরিমল চন্দ্র।

তিনি  সন্দেশ তৈরির প্রক্রিয়াটি জানান এভাবে-সাধারণত ৬/৭ কেজি দুধ থেকে ১ কেজি ছানা পাওয়া যায়। এরপর ১ কেজি ছানার সঙ্গে ১ কেজি চিনি মিশিয়ে অল্প জ্বাল দিতে হয়। ২০ থেকে ৩০ মিনিট জ্বালে পাকিয়ে অল্প আঁচে ৫ মিনিট রাখলেই সন্দেশের কাঁচামাল তৈরি হয়। এ কাঁচামাল পরিমাণমতো নিয়ে কাঠের বাটার উপরে রেখে সন্দেশের আকার দেওয়া হয়। সৌন্দর্যের জন্য সন্দেশের উপর বসানো হয় কিসমিস। তিনি আরও জানান, সন্দেশ তৈরিতে পরিমাণমতো আঁচ ও পাকই হলো প্রধান।

বরিশালে সন্দেশের আরও অনেক কারিগর রয়েছেন। তবে ভোজনরসিকদের বিশেষ টান রয়েছে গুঠিয়ার সন্দেশের প্রতি। তাই অনেকেই গুঠিয়ায় ছুটে আসেন। বিশেষ করে খাঁটি ছানা ও চিনি ছাড়া অন্যকিছুর ব্যবহার না হওয়া এ মাতোয়ারার কারণ। রসিকরা বলেন, এর ঘ্রাণই বলে দেয় খেতে কতটা সুস্বাদু।

বরিশাল নগরীর বিভিন্ন দোকানেও গুঠিয়ার সন্দেশ মিলবে। তবে কেন গুঠিয়ায় ছুটে যাওয়া! এ প্রসঙ্গে আলী জসিম নামক এক ক্রেতা জানান, কোনো কোনো মিষ্টির দোকানিরা গুঠিয়ার সন্দেশ নাম করে তাদের উৎপাদিত সন্দেশ দিয়ে ক্রেতাদের প্রতারিত করেন। এ জন্য বহু ক্রেতা এখনও প্রকৃত সন্দেশের স্বাদ পেতে ২২ কিলোমিটার পথ মাড়িয়ে গুঠিয়া ব্রিজ সংলগ্ন সন্দেশ তৈরির সুতিকাগার বাংলাদেশ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে ভিড় করেন।

গুঠিয়ার সন্দেশ প্রস্তুতকারী অমল ময়রা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থান ছাড়াও বিদেশ থেকে কোনো পর্যটক বা এনজিও পরিদর্শনে এলে এখান থেকে সন্দেশ কিনে নেন। এটি হলো গুঠিয়ার ঐতিহ্য। তাই ঐতিহ্য বজায় রাখতে কখনও ভেজালের আশ্রয় নেওয়া হয় না।

বাজারে অন্যান্য দ্রব্যের মতো গুঠিয়ার সন্দেশের দামও বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি (২৫টি) সন্দেশের দাম ৪০০ টাকা। তারপরও গুঠিয়ার সন্দেশের চাহিদায় লাগেনি ভাটার টান।

প্রতিক্ষণ/এডি/মাসুম

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G